পূর্ব বর্ধমানের রায়নার সুবলদহ গ্ৰামে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে অবহেলায় অপরিচ্ছন্ন

26th February 2020 বর্ধমান
পূর্ব বর্ধমানের রায়নার সুবলদহ গ্ৰামে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে অবহেলায় অপরিচ্ছন্ন


ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবীদের অন্যতম রাসবিহারী বসু। ১৮৮৬ সালের ২৫ মে তিনি পূর্ব বর্ধমানের রায়না ২ ব্লকের সুবলদহ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।দেশ স্বাধীন হবার পর অতিক্রান্ত হয়েছে ৭২ টা বছর। কিন্তু আজও নিজের জন্ম ভিটাতেই অবহেলিত  রয়েগেছেন  আজাদহিন্দ ফৌজের জনক রাসবিহারী বসু ।  
বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা জানাতে নেতা মন্ত্রীরা মাঝে মধ্যে সুবলদহ গ্রামে হজির হন। বিপ্লবীর  প্রতিকৃতিতে মালা পরান । ব্যাস ওই টুকুই । 
বাকি সারাটা বছর ঘুটে শুকানো,ধান ঝাড়া ও ধান শুকানোর জায়গা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশ বরেন্য বিপ্লবীর জন্মভিটা। এই ঘটনায় ব্যাথিত বিপ্লবীর অনুরাগী  ও ইতিহাসবীদরা ।  
 

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত নাড়িয়ে দেওয়া  রাসবিহারী বসুর পিতা কর্মসূত্রে হুগলী জেলার চন্দননগরে থাকতেন । সেখানকার স্কুল ও কলেজের পাঠ সম্পূর্ণ করে রাসবাহারী বসু বিপ্লবী আন্দোলনে যোগদেন । ১৯০৮ সালে তিনি আলিপুর বোমা বিস্ফোরন মামলায় অভিযুক্ত হন । কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর গোপনে বাংলা ,উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ গড়ে তোলেন । পরবর্তী সময়ে বাঘা যতীনের একনিষ্ঠ অনুগামী হয়ে ওঠেন রাসবিহারী বসু । দেশকে  ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বাদের কবল থেকে  মুক্ত করার লক্ষে নানা বিপ্লবী কর্মকান্ড তিনি চালিয়ে যান ।শেষপর্যন্ত ইংরেজ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এড়াতে তিনি দেশ  ছাড়েন।  ১৯১৫ সালের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে তিনি জাপানের জাহাজে চড়ে বসেন ।   জাপানে থেকেও ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি নানা কর্মকান্ড চালিয়ে যান ।  জাপান সরকার রাসবিহারী বসুকে “সেকেন্ড অর্ডার অব মেরিট অব দি রাইজিং সান ”খেতাবে ভূষিত করেন । ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি জাপানের টোকিওয়  রাসবিহারী বসু  শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।


দেশের স্বাধীনতার জন্য এতকিছু করেও রাসবিহারী বসু  নিজ ভূমেই উপেক্ষিতই রয়ে গেছেন । বিপ্লবীকে স্মরণ করার মতো উল্লেখযোগ্য বলতে সুবলদহ গ্রামে রয়েছে তার একটি প্রতিকৃতি  মাত্র। বর্তমান রাজ্য সরকার কয়েক বছর আগেই  বিপ্লবীর জন্ম ভিটাকে পর্যটন স্থান হিসাবে ঘোষনা করেছে ঠিকই । পর্যটন স্থানটি নজরকাড়া ভাবে  সাজিয়ে তোলার জন্য টাকাও বরাদ্দ হয় । কিন্তু এত সব কিছুর পরেও হাল ফেরেনি বিপ্লবীর জন্মভিটার ।তাই বিপ্লবীর জন্মভিটা এখন ঘুটে শুকানো ,ধান শুকানো ও ধান ঝাড়ার জায়গা হিসাবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে । অবহেলার এখানেই শেষ নয় । শৈশবে বিপ্লবী সুবলদহ গ্রামের যে পাঠশালায় পড়েছিলেন সেই পাঠশালা এখন সুলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে । বিদ্যালয়ে পূর্ণ মর্যাদায়  সংরক্ষিত রয়েছে  বিপ্লবীর চিতা ভস্ম। এমন ঐতিহ্যশালী  বিদ্যালয়  এখন ভগ্নদশার চেহারা নিয়েছে । বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মণিদুল ইসলাম বলেন , বিদ্যালয়ের উন্নতির দাবি নিয়ে তিনি  প্রশাসনের নানা মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁকে হতাশ হয়েই থাকতে হয়েছে । বর্ধমানের বিশিষ্ঠ  ইতিহাসবিদ সর্বজীত যশ বলেন , বিপ্লবীর প্রতি মর্যাদা দানে সরকার উদ্যোগী হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে  না। বিপ্লবীর প্রতি মর্যাদাদানে প্রশাসন ও সুবলদহ গ্রামের বাসিন্দাদের  আরো  আন্তরিক  হতে হবে । 


রায়না ২ ব্লকের বিডিও দীপ্যমান মজুমদার বলেন , বিপ্লবীর জন্মভিটাকে  কেউ ঘুটে শুকানো বা ধান জায়গা হিসাবে ব্যবহার করতে পারে  না। কেউ করে থাকলে ঠিক কাজ করেনি ।কেউ যাতে এমন কাজ আর না করে তার ব্যবস্থা নেবেন । একই সঙ্গে বিডিও বলেন ,বিপ্লবীর জন্মভিটা পর্যটন স্থান  হিসাবে ঘোষনা হবার তা সাজিয়ে তোলার জন্য  রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ৫৭ লক্ষ টাকা মিলেছিল । বিপ্লবীর জন্ম ভিটার চারপাশে গার্ড ওয়াল দেওয়ার পাশাপাশি টয়লেট তৈরি হয়েছে । পর্যটন কেন্দ্রে সংগ্রহ শালাও রয়েছে ।বসানো হয়েছে একাধীক হাইমাস লাইট । দ্বিতীয় দফায় টাকা মিললে আরো কাজ করা হবে বলে বিডিও জানিয়েছেন ।  
 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।